গ্রামের নাম শান্তিপুর। এই গ্রামে মিঠুন নামে একজন হোটেল ব্যবসায়ী বাস করতেন। তার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ভৌতিক ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। গ্রামের বাজারে মিঠুনের একটি ভাতের হোটেল ছিল। তার ব্যবসা খুব একটা ভালো চলছিল না; এদিকে তার পরিবারের লোকজনেরও নানা রকম অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। তিনি তার স্ত্রী, তিন বছরের একটি মেয়ে এবং তার মাকে নিয়ে বসবাস করতেন। মেয়েটিরও সারা বছর অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকত। অনেকেই বলত, বাড়িটা অপয়া। বাড়িতে জিন-ভূতের আছর আছে। কিন্তু মিঠুনের করার কিছুই ছিল না, কারণ এটা তার বাপ-দাদার ভিটা। এটা ছেড়ে তিনি কোথায় যাবেন?
চলুন মূল ঘটনায় যাওয়া যাক। একদিন মিঠুন তার হোটেল বন্ধ করে রাতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরল। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ঘুমে যেই তার চোখটা বন্ধ হয়ে আসছিল, অমনি সে একটি ভুতুড়ে মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। কে যেন তাকে বলছে, 'মিঠুন, এই মিঠুন, তুই সত্যটা প্রকাশ করে দে।' তখন মিঠুন 'কে? কে এখানে?' বলে চিৎকার করে শোয়া থেকে উঠে বসল। মিঠুনের স্ত্রীও তখন সজাগ হয়ে গেল এবং তাকে জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে? এরকম চিৎকার করছো কেন?' তখন মিঠুন বলল, 'একটু আগে আমার নাম ধরে কে যেন আমাকে ডাকছিল। মনে হচ্ছিল পাশের জঙ্গল থেকে আওয়াজটা এসেছে।'
তখন মিঠুনের স্ত্রী বলল, 'ও কিছু না, হয়তো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছ।' মিঠুন বলল, 'এর আগেও আমি ঐ কণ্ঠটা শুনেছি। অনেক ভারি একটি মেয়েলি কণ্ঠ। পাশের জঙ্গলের ভিতর থেকে এসেছে মনে হয়েছে।' মিঠুনের স্ত্রী বলল, 'আমাদের বাড়িতে মনে হয় জিন-ভুতের আছর আছে। বাড়িতে বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই লেগেই আছে।' তখন মিঠুন বলল, 'কি করবো বুঝতে পারছি না। এদিকে মায়েরও শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে, কোনো ডাক্তারই রোগ ধরতে পারছে না।'
'আমাদের পরিবারের অনেকেই রহস্যজনকভাবে এবং অজানা রোগে মারা গেছেন। আমার বাবা, ঠাকুরদা, ঠাকুরমা—কারোরই মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। আমার ঠাকুরদা, ঠাকুরমা আমার জন্মের আগেই মারা গেছেন। বাবার কাছ থেকে শুনেছি, আমার ঠাকুরদা নাকি একদিন সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে আমাদের বাড়ির পাশের পুকুরে হাত-মুখ ধুতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিলেন। বাবা বলেছিলেন, ব্যাপারটা নাকি ছিল অবিশ্বাস্য, কারণ আমার ঠাকুরদা সাঁতার জানতেন। তাছাড়া তখন ছিল গ্রীষ্মকাল, পুকুরের ঘাট ছিল শুকনো, তাই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না।'
'তারপর আমার ঠাকুরমা একটা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪ বছর শয্যাশায়ী থাকার পর তিনিও মারা যান। আমার ঠাকুরমার রোগটা নাকি কোনো ডাক্তারই ধরতে পারেনি। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি নাকি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন; কোনো কথা বলতে পারতেন না। বাবা বলেছিলেন, ঠাকুরমা নাকি প্রায়ই কি যেন একটা বলার চেষ্টা করতেন, কিন্তু বলতে পারতেন না। একজন তান্ত্রিক নাকি বলেছিল, উনার উপর নাকি একটা অশুভ আত্মা ভর করেছে। সেই আত্মা যা চায়, তাকে তা দিলে বা তার কথামতো কাজ করলে ঠাকুরমা নাকি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু ঠাকুরমা বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারতেন না।'
'ঠাকুরমার মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন আমাদের বাড়িতে তেমন কিছু ঘটেনি। তবে মা বলেছেন, আমি নাকি ছোটবেলায় মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করতাম। আমার বাবাও আমার মতো রাতে ভয়ানক কোনো স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু স্বপ্নে তিনি কি দেখতেন, কোনোদিন আমাদেরকে বলেননি। আমার বাবা ছাগল পালতেন। একদিন সন্ধ্যেবেলা বাড়ির পাশের জঙ্গলে ছাগল খুঁজতে গিয়ে জঙ্গলের ভিতর বাবা কোনো কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তাকে জঙ্গলের ভিতর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ডাক্তার বলেছিল, উনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। কিন্তু উনার হার্টে কোনো সমস্যা ছিল না। তাছাড়া আমার বাবার স্বাস্থ্য বেশ ভালো ছিল।'
'আমার বাবার মৃত্যুটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। বাবার মৃত্যুতে মাও অনেক ভেঙে পড়েছেন।' তখন মিঠুনের স্ত্রী বলল, 'আমার ভীষণ ভয় করছে, চলো আমরা এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই।' তখন মিঠুন বলল, 'এটা আমার বাপ-দাদার ভিটা, এটা ছেড়ে কোথায় যাব? তুমি ভয় পেও না, ঘুমিয়ে যাও।' মিঠুন বিছানা থেকে নেমে এক গ্লাস পানি পান করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
তারপর আরেকদিনের ঘটনা, মিঠুন বাড়ি ফিরে দেখল তার মার ভীষণ জ্বর। মিঠুন মাকে রাতের খাবার খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। মিঠুনের স্ত্রী উনার কপালে একটা জলপট্টি দিয়ে দিল। মিঠুন তার মাকে বলল, 'মা, রাতে যদি শরীর বেশি খারাপ লাগে, আমাদেরকে ডাক দিও।' মিঠুনের মা বললেন, 'ঠিক আছে, তোমরা গিয়ে শুয়ে পড়, আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না, আমি ঠিক আছি।' মিঠুন ও তার স্ত্রী তাদের কামরায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
মাঝরাতে মিঠুনের মায়ের গোঙানির শব্দ শুনে মিঠুনের ঘুম ভেঙে গেল। সে তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে মায়ের কামরায় ঢুকে দেখল, মা মুখ দিয়ে গোঙাচ্ছেন আর ছটফট করছেন। সে তার মার গায়ে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে তার মার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে মা? শরীর খারাপ লাগছে?' তার মার ঘুম ভেঙে গেল, তিনি উঠে বসতে চাইলেন। মিঠুন তাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। মিঠুনের স্ত্রী এক গ্লাস পানি এনে তাকে পান করাল। মিঠুন জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে মা?'
তিনি কথা বলতে শুরু করলেন, বললেন, 'খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নে দেখলাম, কে যেন আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছে। এই স্বপ্নটা আমি প্রায়ই দেখি। এই কামরায় যেন কিছু একটা আছে, আমি টের পাই, কিন্তু তোদেরকে কিছু বলি না, তোরা ভয় পাবি বলে।' মিঠুন মনে মনে ভাবল, এই কামরায় এককালে তার ঠাকুরমা থাকতেন। একজন তান্ত্রিক বলেছিল, ঠাকুরমার উপর নাকি একটি অশুভ আত্মা ভর করেছিল। তবে কি সেই অশুভ আত্মা এখন তার মাকে বিরক্ত করছে?
মিঠুন বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। তার স্ত্রী তাকে বলল একজন তান্ত্রিক বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু মিঠুনের এসব একদম পছন্দ না। সে জিন-ভূত বিশ্বাস করে, তবে জিন-ভূতকে খুব একটা ভয় পায় না। তাছাড়া এখনকার তান্ত্রিকরা বেশিরভাগই ভণ্ড।
এরপরের ঘটনা একদিন রাতে মিঠুন তার হোটেল বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিল। যেই সে তাদের বাড়ির উঠোনে পৌঁছেছে, অমনি সেই ভয়ঙ্কর মেয়েলি কণ্ঠ শুনতে পেল। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে কে যেন চিৎকার করে বলছে, "মিঠুন, এই মিঠুন, তুই সত্যটা প্রকাশ করে দে"।
শব্দটা আসছিল তাদের বাড়ির পাশের জঙ্গলের ভেতর থেকে। মিঠুন ছিল খুবই সাহসী। মিঠুন সিদ্ধান্ত নিল আজকে সে ওই জঙ্গলে প্রবেশ করবে। কে এই অতৃপ্ত আত্মা, সে কোন সত্যটা প্রকাশ করতে চায় আর কেনইবা তার পরিবারের লোকজনদের ক্ষতি করছে। মিঠুন ভাবলো, মরলে মরবো, কিন্তু আজ এর একটা বিহিত করতে হবে। মিঠুন তার টর্চলাইট জ্বালিয়ে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়লো। অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে সে জঙ্গলের ভেতরে একটি পরিত্যক্ত শ্মশানঘাটের পাশে এসে থামল।
শ্মশানঘাটটা অনেক আগের। এটা এখন আর ব্যবহৃত হয় না। হঠাৎ পেছন থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠে কে যেন তার নাম ধরে ডাক দিল, "এই মিঠুন"। মিঠুন এতটাই ভয় পেল যে তার হাত থেকে টর্চলাইটটা পড়ে গেল। সে সাহস করে পেছন ফিরে তাকালো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো একটা সাদা লম্বা মেয়েলি অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির মুখ ধবধবে সাদা। চোখ, মুখ, নাক দিয়ে যেন রক্ত বের হচ্ছে। মিঠুনের জায়গায় অন্য কেউ হলে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়তো। কিন্তু মিঠুন অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছে। একবার ভেবেছিল ঝেড়ে দৌড় দেবে। কিন্তু তার সমস্ত শরীর যেন শক্ত হয়ে গিয়েছিল। সে কিছুতেই নড়তে পারছিল না।
তারপর ওই সাদা অবয়বটি কথা বলতে শুরু করলো, "মিঠুন, তুই এসেছিস, আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না, তুই শুধু সত্যটা প্রকাশ করে দে"। মিঠুনের সারা শরীর ঘেমে গিয়েছিল। তার হাত-পা ভয়ে কাঁপছিল। সে তার সমস্ত শরীরের সব শক্তি একত্রিত করে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কোন সত্য প্রকাশ করবো, আর কেনইবা আমার পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করেছো"।
তখন ওই সাদা অবয়বটি বলে উঠলো, "তাহলে শোন, আমি তোদের পাশের গ্রামের জিতেন্দ্র কাকার বাড়িতে ঝি এর কাজ করতাম। জিতেন্দ্র কাকার স্ত্রী তোর ঠাকুরমার বান্ধবী ছিলেন। তোর ঠাকুরমা ছিলেন খুবই লোভী একজন মহিলা। একদিন জিতেন্দ্র কাকার বাড়িতে তোর ঠাকুরমা বেড়াতে যায়। ওই দিনই জিতেন্দ্র কাকার বাড়ি থেকে ওনার স্ত্রীর একটি গলার হার চুরি হয়ে যায়। যেহেতু আমি ছিলাম কাজের লোক, প্রথমেই আমার উপর সবার সন্দেহ পড়লো। কিন্তু আমি ছিলাম নির্দোষ। গ্রামে আমার নামে সালিশ বসানো হল। তোর ঠাকুরদা ছিলেন গ্রামের মোড়ল। তিনি সালিশে বসে জেরা করতে শুরু করলেন।
প্রথমেই জিতেন্দ্র কাকাকে জিজ্ঞেস করলেন, "যেদিন তোমার ঘর থেকে হারটা চুরি হয়েছিল, সেদিন বাইরে থেকে কোনো লোক গিয়েছিল তোমার ঘরে?" জিতেন্দ্র কাকা আমার দিকে হাত দেখিয়ে বললেন, "আমার ঘরে ওই দিন শুধু এই কাজের মেয়েটি বাইরে থেকে এসেছিল। ও প্রতিদিন আমার বাড়িতে এসে কাজ করে দিয়ে যায়।" তোর ঠাকুরমার নাম ছিল বীণা। আমি উনাকে বীণা মাসি বলে ডাকতাম। আমি জিতেন্দ্র কাকাকে বললাম, "কাকা, আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন, ওই দিন বীণা মাসি আপনার বাড়িতে গিয়েছিলেন।" একথা শুনে তোর ঠাকুরদা আমার উপর খুব রেগে গেলেন। তিনি বললেন, "তোর এত বড় সাহস, চুরি করেছিস আবার আমার বউকে ফাঁসাতে চাস।"
তিনি চিৎকার করে বললেন, "এই, কে আছিস, দোষ স্বীকার না করা পর্যন্ত ওকে বেত্রাঘাত করতে থাক।" তখন সালিশে উপস্থিত একটা লোক আমাকে বেত মারা শুরু করলো। আমার স্বাস্থ্য ছিল বেশ হালকা-পাতলা। শরীর-স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো ছিল না। তাই বেতের আঘাত সহ্য করতে পারলাম না। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। রাতে শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসলো। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরছিল। ঘরে আমার মা আর ছোট ভাই ছিল। তারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।
ভোর রাতে আমি মারা গেলাম। আসলে হারটি তোর ঠাকুরমা চুরি করেছিলেন। হারটি তোদের বাড়ির পেছনের বটগাছের পাশে গর্ত করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তোর ঠাকুরদা আর ঠাকুরমাকে আমি বলেছিলাম সত্য প্রকাশ করতে। কিন্তু তারা লোকলজ্জার ভয়ে সত্য প্রকাশ করেনি। তাই তাদেরকে আমি হত্যা করেছি। তোর বাবাকেও বলেছিলাম সত্য প্রকাশ করতে, সেও রাজি হয়নি। তাই তাকেও হত্যা করেছি। তোকে হত্যা করতে চাই না, কারণ তুই মারা গেলে এই সত্য আর কোনোদিনই প্রকাশ পাবে না। তাই তুই সত্যটা প্রকাশ করে আমার আত্মাটাকে শান্ত করে দে, তাহলে আর তোর পরিবারের কাউকে বিরক্ত করবো না।
এরপর সাদা অবয়বটা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেল। মিঠুন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, সে জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলো, সে তার ঘরে, তার বিছানায় শুয়ে আছে। তার স্ত্রী এবং তার মা মাথায় পানি ঢালছিল। জ্ঞান ফিরেছে দেখে তার মা বলল, "বাবা, তুই এত রাতে জঙ্গলে কেন গিয়েছিলি? তুই রাতে বাড়ি না ফেরায় গ্রামের লোকজনদের তোকে খুঁজতে পাঠিয়েছিলাম, তারা তোকে জঙ্গলের ভিতর থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে এনে দিয়েছে।"
মিঠুন দুই দিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি। তার গায়ে অনেক জ্বর ছিল। সে সুস্থ হওয়ার পর একদিন তাদের বাড়ির পেছনের বটগাছের পাশে মাটি খুঁড়তে শুরু করলো। মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে হঠাৎ দেখতে পেল, পলিথিনে মোড়ানো একটি বস্তু। পলিথিন সরাতেই বেরিয়ে এল একটি চারকোনা কাঠের বক্স। বক্স খুলে দেখা গেল, ভিতরে একটি গলার হার। মিঠুন তার মা আর স্ত্রীকে সব খুলে বলল। তারা তাকে হারটি ফিরিয়ে দিতে বললেন।
জিতেন্দ্র দাস মিঠুনের ঠাকুরদার সমবয়সী লোক। মাঝে মাঝে মিঠুনের হোটেলে চা খেতে আসেন। মিঠুন গলার হারটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জিতেন্দ্র দাসের বাড়িতে গেল। ওনার স্ত্রী মারা গেছেন। বাড়িতে ওনার ছেলে এবং ছেলের স্ত্রী ওনার দেখাশোনা করেন। জিতেন্দ্র দাস বিছানায় শুয়ে ছিলেন। মিঠুনকে দেখে উঠে বসলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, "কিরে মিঠুন, তুই হঠাৎ কী মনে করে এদিকে এলি? তুই তো আমাদের এদিকে খুব একটা আসিস না।"
মিঠুন কাঠের বক্স থেকে গলার হারটি বের করে জিতেন্দ্র দাসের হাতে দিল। জিতেন্দ্র দাস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "এই হার তুই কোথায় পেলি? এটাতো তোর জন্মের অনেক আগে আমাদের বাড়ি থেকে চুরি হয়েছিল। এটা আমাদের স্ত্রীর খুব পছন্দের একটি হার ছিল।" জিতেন্দ্র দাসের চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। মিঠুন বলল, "ঠাকুরদা, এটা আমাদের বাড়িতে পাওয়া গেছে।" জিতেন্দ্র দাস আর বুঝতে বাকি রইল না, হারটি কে চুরি করেছিল। তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "একজনের সাথে অনেক বড় অন্যায় হয়ে গেছে, সে কি আমাকে মাফ করবে?"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন